সংবাদ শিরোনাম ::
তারেক রহমানের একত্রিশ দফার লিফলেট বিতরণ করেন আব্দুস সালাম তুহিন  চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ এর বিএনপির এমপি পদপ্রার্থী ইঞ্জিঃ মাসুদের বাড়ি -বাড়ি গিয়ে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ ভুয়া ফেসবুক পেইজে গুজব ছড়ানোর প্রতিবাদ মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাজনের সুশাসনের ডাক: রাজশাহী-৫ এ জামায়াত প্রার্থী নুরজ্জামান লিটনের গণসংযোগ ও সমাবেশ। গোদাগাড়ীতে আটক সোনার বারকে ঘিরে ধোঁয়াশা তানোরে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মিলন মেলা নাইস গার্ডেন পার্কে অনুষ্ঠিত হবে আপনারা সকলে আমন্ত্রিত! গোমস্তাপুর আড্ডা থেকে নিখোঁজের দেড় মাসেও সন্ধান মেলেনি আজাহারের রাজশাহী-৬: বিএনপির মনোনয়ন যুদ্ধে এগিয়ে কে? বিদ্যুৎ সার্কিটে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে জামায়াতের সহায়তা প্রদান 📰 রাজশাহী-৫ আসনে গণজোয়ার: বেলপুকুরে জামায়াত প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণা

কালের বিবর্তনে কাঁচামাটির মৃৎশিল্প এখন মাটির তলায়!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:১৭:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫ ৬৭ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

সোহানুল হক পারভেজ রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান : রাজশাহীর তানোরে মাটির তৈরি হাড়ি পাতিলসহ মাটির তৈরি এক সময়ের জনপ্রিয় বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এখন আর তৈরি হয় না। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্পীদের হাতের ছোঁযায় তৈরি করা মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র। এক সময় তানোর সদর পালপাড়ায় পালরা মাটির তৈরি হাড়ি পাতিল তৈরিতে প্রচুর ব্যস্ত সময় পার করতেন। এখন পেশা বদলেছে তাদের। কেউ চাকরি ব্যবসাসহ কৃষি কাজ নিয়েই জীবিকা নির্বাহ করছেন। এক সময় পালদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান ছিলো মাটির তৈরি হাড়ি পাতিল তৈরি ও বিক্রি।তবে তানোর সদর পাল পাড়ার মৃত নিতন কুমার পালের ছেলে প্রদীপ কুমার পাল পার্শ্বের মোহনপুর উপজেলার বেলনা গ্রাম থেকে মাটির হাড়ি পাতিল ও মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনে এনে বাড়ির সাথের মুদি দোকানের সামনে রেখে বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে তাদের গ্রামে আর কেউ মাটির তৈরি হাড়ি পাতিল তৈরির কাজ করেন না। তানোর পৌর এলাকার কালিগঞ্জ পাল পাড়া ও কামারগাঁ ইউপির শ্রীখন্ডা গ্রামে দু’ একজন তৈরি করলেও হাতে গোনা কয়েকটি হাড়ি পাতির তৈরি করেন তাও আবার বিভিন্ন দিবস উদযাপন উপলক্ষে। তিনি বলেন, মাটির তৈরি হাড়ি পাতিলের দাম কম হওয়ায় এই পেশায় তেমন লাভ হয় না। ফলে, এই শিল্পটি এখন প্রায় বিলুপ্ত। তার দোকানের সামনে রাখা হাড়ি পাতিল খুব কমই বিক্রি হয়। বাপ দাদার পেশা হিসেবেই এটিকে এই গ্রামের একমাত্র তিনিই ধরে রেখেছেন এই মাটির তৈরি হাড়ি পাতিল বিক্রির পেশা।প্রত্যেকটি দেশের রয়েছে নিজস্ব শিল্প ও সংস্কৃতি। একেকটি শিল্পের বিস্তারের পেছনে রয়েছে দেশ বা জাতির অবদান। বাংলাদেশ রূপ বৈচিত্রের দেশ। এ দেশের অন্যতম শিল্প হচ্ছে মৃৎশিল্প। আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মৃৎশিল্পের সম্পর্ক অনেক গভীর। ‘মৃৎ’ শব্দের অর্থ মৃত্তিকা বা মাটি আর ‘শিল্প’ বলতে সুন্দর ও সৃষ্টিশীল বস্তুকে বোঝায়। এজন্য মাটি দিয়ে দিয়ে তৈরি সব শিল্পকর্মকেই মৃৎশিল্প বলা হয়। যারা এই শিল্পকর্মের সঙ্গে জরিত তাদের বলা হয় কুমার। প্রাচীনকাল থেকে বংশানুক্রমে গড়ে ওঠা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। আজকাল কুমারপাড়ার মেয়েদের ব্যস্ততা অনেক কমে গেছে। কাঁচামাটির গন্ধ তেমন পাওয়া যায় না। হাটবাজারে আর মাটির তৈজসপত্রের পসরা বসে না। এখন মাটির জিনিসপত্র শুধু বিশেষ দিন গুলোতে, বা বিশেষ কারণেই ব্যবহার হয়।

ফলে মৃৎশিল্পের প্রসার ঘটলেও, কিছু কিছু বিশেষ দিন বা কাজেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে বাঙালির ঐতিহ্যমণ্ডিত এই শিল্প। তবে নির্মম বাস্তবতার সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনো কিছু জরাজীর্ণ কুমার পরিবার ধরে রেখেছেন বাপ-দাদার এই ব্যবসায়। কুমাররা অসম্ভব শৈল্পিক দক্ষতা ও মনের মধ্যে লুকায়িত মাধুর্য দিয়ে চোখ ধাঁধানো সব কাজ করে থাকেন। কালের বিবর্তনে, শিল্পায়নের যুগে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এই মৃৎ শিল্প। বাজারে যথেষ্ট চাহিদা না থাকা, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজের পরিধি পরিবর্তন না করা, কাজে নতুনত্বের অভাব, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসঙ্গতি, কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত মাটির মূল্য বৃদ্ধি, কাঁচামাল ও উৎপাদিত সামগ্রী পরিবহনে সমস্যা নানা কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে বাংলার বহু বছরের এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প।

শুধু তাই নয়, প্লাস্টিক, স্টিল, ম্যালামাইন, সিরামিক ও সিলভারসহ বিভিন্ন ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি করা এসব তৈজসপত্রের নানাবিধ সুবিধার কারণে দিন দিন আবেদন হারাচ্ছে মাটির তৈরি শিল্পকর্ম। এখন বিশেষ বিশেষ সময়ে অনুষ্ঠিত মেলায় দেখা মিলে মাটির এসব তৈজসপত্র। বিশেষ করে বাংলা সালের বিদায় ও বরণ উৎসবে। মেলায় আগতদের হাতে হাতে স্থান পাবে এসব মাটির জিনিস। মঙ্গল শোভাযাত্রায়ও স্থান করে নেয় এগুলো। রাজশাহীর ঐতিহ্যগত ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে, এক সময় রাজশাহী শহরে কুমারপাড়ায় তৈরি হতো মাটির শিল্প। কিন্তু কালের পরিক্রমায় মাটির তৈরি আসবাবপত্রের চাহিদা লোপ পাওয়ায় নগরীর কামারেরা ছেড়েছেন তাদের পূর্ব-পুরুষের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের পেশা। এখন নগরীতে একটি ঘরেও হয় না মৃৎশিল্পের কাজ। মাটির এ শিল্পটি যেনো মাটিতেই গেছে।

এ শিল্পের অবস্থা জানতে গিয়ে আরো কথা হয় পেশায় ৩ জনই এখন ফার্মেসী ব্যবসায়ী তানোরের পালপাড়ার ভোলানাথ কুমার পাল, হিরানাথ কুমার পাল ও প্রশান্ত পালের সাথে। তারা বলেন, আগের মত এখন মাটির জিনিসপত্রের তেমন চাহিদা নেই। সারা বছর তেমন বেচা-কেনা হয় না। পূজায় মাটির হাঁড়ি-পাতিল কাজে লাগে, তাই সেই সময় প্রয়োজন হয় একটু। আবার মিষ্টির দোকানে দইয়ের পাতিল, ফুলের টব বিক্রি হয়। তবে তাদের গ্রামে কেউ এগুলো তৈরি করেন না প্রয়োজন হলে বাইরে থেকে নিয়ে আসেন। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় এই শিল্পে অনেকটা ভাটা পড়লেও নতুন করে মৃৎশিল্পের আর একটি শাখা উন্মোচিত হয়েছে।

সেটি হলো নান্দনিক মৃৎশিল্প। এ শাখার মৃৎশল্পীরা মাটি দিয়ে বিভিন্ন শৌখিন সামগ্রী ও শিল্পকর্ম তৈরি করে থাকেন, ইংরেজিতে একে বলা হয় পটারি শিল্প। তবে, টেরাকোটা বা মৃৎফলকে খোদাই করে সুন্দর সুন্দর শোপিস তৈরির জিনিসপত্রে এখনো আকর্ষন করে সবাইকে । এ ছাড়া বিভিন্ন মূর্তি, অলঙ্কার, নকশি পাত্র, ঘণ্টা ইত্যাদি তৈরি করে এখনো জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায় হিসেবে অনেকই ধরে রাখলেও এসবে তানোরের পালদের তেমন কোন শিল্পী নাই। রাজশাহীসহ দেশের অনেক দোকানে এসব শৌখিন মৃৎসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। শিল্পটিকে বাচিয়ে রাখতে প্রয়োজন সঠিক নজরদারি। সরকারের পক্ষ থেকে কুমার সম্প্রদায়দের জন্য সহজ ঋণ,কাঁচামাল প্রদান, ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাহায্য করলে, এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

কালের বিবর্তনে কাঁচামাটির মৃৎশিল্প এখন মাটির তলায়!

আপডেট সময় : ১১:১৭:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

 

সোহানুল হক পারভেজ রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান : রাজশাহীর তানোরে মাটির তৈরি হাড়ি পাতিলসহ মাটির তৈরি এক সময়ের জনপ্রিয় বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এখন আর তৈরি হয় না। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্পীদের হাতের ছোঁযায় তৈরি করা মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র। এক সময় তানোর সদর পালপাড়ায় পালরা মাটির তৈরি হাড়ি পাতিল তৈরিতে প্রচুর ব্যস্ত সময় পার করতেন। এখন পেশা বদলেছে তাদের। কেউ চাকরি ব্যবসাসহ কৃষি কাজ নিয়েই জীবিকা নির্বাহ করছেন। এক সময় পালদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান ছিলো মাটির তৈরি হাড়ি পাতিল তৈরি ও বিক্রি।তবে তানোর সদর পাল পাড়ার মৃত নিতন কুমার পালের ছেলে প্রদীপ কুমার পাল পার্শ্বের মোহনপুর উপজেলার বেলনা গ্রাম থেকে মাটির হাড়ি পাতিল ও মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনে এনে বাড়ির সাথের মুদি দোকানের সামনে রেখে বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে তাদের গ্রামে আর কেউ মাটির তৈরি হাড়ি পাতিল তৈরির কাজ করেন না। তানোর পৌর এলাকার কালিগঞ্জ পাল পাড়া ও কামারগাঁ ইউপির শ্রীখন্ডা গ্রামে দু’ একজন তৈরি করলেও হাতে গোনা কয়েকটি হাড়ি পাতির তৈরি করেন তাও আবার বিভিন্ন দিবস উদযাপন উপলক্ষে। তিনি বলেন, মাটির তৈরি হাড়ি পাতিলের দাম কম হওয়ায় এই পেশায় তেমন লাভ হয় না। ফলে, এই শিল্পটি এখন প্রায় বিলুপ্ত। তার দোকানের সামনে রাখা হাড়ি পাতিল খুব কমই বিক্রি হয়। বাপ দাদার পেশা হিসেবেই এটিকে এই গ্রামের একমাত্র তিনিই ধরে রেখেছেন এই মাটির তৈরি হাড়ি পাতিল বিক্রির পেশা।প্রত্যেকটি দেশের রয়েছে নিজস্ব শিল্প ও সংস্কৃতি। একেকটি শিল্পের বিস্তারের পেছনে রয়েছে দেশ বা জাতির অবদান। বাংলাদেশ রূপ বৈচিত্রের দেশ। এ দেশের অন্যতম শিল্প হচ্ছে মৃৎশিল্প। আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মৃৎশিল্পের সম্পর্ক অনেক গভীর। ‘মৃৎ’ শব্দের অর্থ মৃত্তিকা বা মাটি আর ‘শিল্প’ বলতে সুন্দর ও সৃষ্টিশীল বস্তুকে বোঝায়। এজন্য মাটি দিয়ে দিয়ে তৈরি সব শিল্পকর্মকেই মৃৎশিল্প বলা হয়। যারা এই শিল্পকর্মের সঙ্গে জরিত তাদের বলা হয় কুমার। প্রাচীনকাল থেকে বংশানুক্রমে গড়ে ওঠা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। আজকাল কুমারপাড়ার মেয়েদের ব্যস্ততা অনেক কমে গেছে। কাঁচামাটির গন্ধ তেমন পাওয়া যায় না। হাটবাজারে আর মাটির তৈজসপত্রের পসরা বসে না। এখন মাটির জিনিসপত্র শুধু বিশেষ দিন গুলোতে, বা বিশেষ কারণেই ব্যবহার হয়।

ফলে মৃৎশিল্পের প্রসার ঘটলেও, কিছু কিছু বিশেষ দিন বা কাজেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে বাঙালির ঐতিহ্যমণ্ডিত এই শিল্প। তবে নির্মম বাস্তবতার সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনো কিছু জরাজীর্ণ কুমার পরিবার ধরে রেখেছেন বাপ-দাদার এই ব্যবসায়। কুমাররা অসম্ভব শৈল্পিক দক্ষতা ও মনের মধ্যে লুকায়িত মাধুর্য দিয়ে চোখ ধাঁধানো সব কাজ করে থাকেন। কালের বিবর্তনে, শিল্পায়নের যুগে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এই মৃৎ শিল্প। বাজারে যথেষ্ট চাহিদা না থাকা, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজের পরিধি পরিবর্তন না করা, কাজে নতুনত্বের অভাব, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসঙ্গতি, কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত মাটির মূল্য বৃদ্ধি, কাঁচামাল ও উৎপাদিত সামগ্রী পরিবহনে সমস্যা নানা কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে বাংলার বহু বছরের এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প।

শুধু তাই নয়, প্লাস্টিক, স্টিল, ম্যালামাইন, সিরামিক ও সিলভারসহ বিভিন্ন ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি করা এসব তৈজসপত্রের নানাবিধ সুবিধার কারণে দিন দিন আবেদন হারাচ্ছে মাটির তৈরি শিল্পকর্ম। এখন বিশেষ বিশেষ সময়ে অনুষ্ঠিত মেলায় দেখা মিলে মাটির এসব তৈজসপত্র। বিশেষ করে বাংলা সালের বিদায় ও বরণ উৎসবে। মেলায় আগতদের হাতে হাতে স্থান পাবে এসব মাটির জিনিস। মঙ্গল শোভাযাত্রায়ও স্থান করে নেয় এগুলো। রাজশাহীর ঐতিহ্যগত ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে, এক সময় রাজশাহী শহরে কুমারপাড়ায় তৈরি হতো মাটির শিল্প। কিন্তু কালের পরিক্রমায় মাটির তৈরি আসবাবপত্রের চাহিদা লোপ পাওয়ায় নগরীর কামারেরা ছেড়েছেন তাদের পূর্ব-পুরুষের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের পেশা। এখন নগরীতে একটি ঘরেও হয় না মৃৎশিল্পের কাজ। মাটির এ শিল্পটি যেনো মাটিতেই গেছে।

এ শিল্পের অবস্থা জানতে গিয়ে আরো কথা হয় পেশায় ৩ জনই এখন ফার্মেসী ব্যবসায়ী তানোরের পালপাড়ার ভোলানাথ কুমার পাল, হিরানাথ কুমার পাল ও প্রশান্ত পালের সাথে। তারা বলেন, আগের মত এখন মাটির জিনিসপত্রের তেমন চাহিদা নেই। সারা বছর তেমন বেচা-কেনা হয় না। পূজায় মাটির হাঁড়ি-পাতিল কাজে লাগে, তাই সেই সময় প্রয়োজন হয় একটু। আবার মিষ্টির দোকানে দইয়ের পাতিল, ফুলের টব বিক্রি হয়। তবে তাদের গ্রামে কেউ এগুলো তৈরি করেন না প্রয়োজন হলে বাইরে থেকে নিয়ে আসেন। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় এই শিল্পে অনেকটা ভাটা পড়লেও নতুন করে মৃৎশিল্পের আর একটি শাখা উন্মোচিত হয়েছে।

সেটি হলো নান্দনিক মৃৎশিল্প। এ শাখার মৃৎশল্পীরা মাটি দিয়ে বিভিন্ন শৌখিন সামগ্রী ও শিল্পকর্ম তৈরি করে থাকেন, ইংরেজিতে একে বলা হয় পটারি শিল্প। তবে, টেরাকোটা বা মৃৎফলকে খোদাই করে সুন্দর সুন্দর শোপিস তৈরির জিনিসপত্রে এখনো আকর্ষন করে সবাইকে । এ ছাড়া বিভিন্ন মূর্তি, অলঙ্কার, নকশি পাত্র, ঘণ্টা ইত্যাদি তৈরি করে এখনো জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায় হিসেবে অনেকই ধরে রাখলেও এসবে তানোরের পালদের তেমন কোন শিল্পী নাই। রাজশাহীসহ দেশের অনেক দোকানে এসব শৌখিন মৃৎসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। শিল্পটিকে বাচিয়ে রাখতে প্রয়োজন সঠিক নজরদারি। সরকারের পক্ষ থেকে কুমার সম্প্রদায়দের জন্য সহজ ঋণ,কাঁচামাল প্রদান, ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাহায্য করলে, এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে।