■ মাসুদ রানা শিবগঞ্জ উপজেলা (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি
টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে প্রতি বছরের মতো এবারও এতিম শিশুদের জন্য ইফতারি ও রাতের খাবারের আয়োজন করেছে আলোর পথে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন'। চার বছর ধরে শিবগঞ্জ উপজেলার তেলকুপি বিশ্বাসটোলা নূরানী, হাফেজিয়া ও এতিমখানার ৬৫ এতিম শিক্ষার্থীদের ও বৃদ্ধ (বয়স্ক) মানুষ এবং কায়িক শ্রমিকদের সম্মানে রমজান মাসজুড়েই এ আয়োজন করা হয়ে থাকে সংগঠনটির পক্ষ থেকে।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিনোদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম ও নবম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে একসাথে 'আলোর পথে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন' গড়ে তোলে। স্কুল যাতায়াত ও টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে শুরুর দিকে তারা দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা করত। পরে খাদ্যসামগ্রী, বস্ত্র, চিকিৎসাসামগ্রী, শীতবস্ত্র, শিক্ষা উপকরণ, ক্রীড়া উপকরণ বিতরণ করে। তাদের এ উদ্যোগ দেখে সচ্ছল ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা তহবিলে অর্থসহ বিভিন্ন সামগ্রী দান করে যাচ্ছেন। বর্তমানে সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী ও সমাজসেবী। মূল দায়িত্বে রয়েছেন প্রতিষ্ঠাকালের উদ্যোক্তারা, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বৃন্দ ও কার্যনির্বাহী কমিটি। এ সংগঠনের কার্যক্রমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলে রাষ্ট্রীয়, ধর্মীয়, সামাজিক ও প্রকৃতির উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট কাজগুলো। 'মানবসেবা ও সমাজসেবায় গড়বো দেশ স্মার্ট হবে মোদের সোনার বাংলাদেশ' এই প্রতিপাদ্য কে সামনে রেখে তাঁদের বছরব্যাপী বিস্তৃত বিভিন্ন ধরনের মহতী উদ্দ্যোগ ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছেন তারা।
সংগঠনের শিক্ষার্থীরা জানান, শিবগঞ্জ উপজেলার তেলকুপি বিশ্বাসটোলা নূরানী, হাফেজিয়া ও এতিমখানা মাদ্রাসাটি অর্থাভাবে বন্ধের উপক্রক্রম হলে তারা পাশে দাঁড়ান। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সারা বছরই অনেক হহৃদয়বান মানুষ এতিম শিশুদের জন্য খাবার, পোশাকসহ নানা উপকরণ দিয়ে সহায়তা করেন। রমজান মাসের ৩০ দিন তাদের টিফিনের টাকার পাশাপাশি এসব সহৃদয়বান মানুষের সহায়তায় ইফতারি ও রাতের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক; আরাফাত হোসেন জানান, ২০২১ সাল থেকে আমাদের সংগঠন রমজানের ফুড ইভেন্টের মাধ্যমে এতিমখানা ও মাদ্রাসার বাচ্চাদের ইফতারি ও রাতের খাবারের আয়োজন করে আসছেন। 'আলোর পথে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন' নামে ফেসবুকে ও ইউটিউব আমাদের একটি পেজ রয়েছে। রমজান মাসের কয়েকদিন আগে এই পেজে এতিমদের সহায়তার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়ে থাকে। এর পর থেকেই বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ করে কোনো না কোনো দিনের ইফতারি ও রাতের খাবারের দায়িত্ব নিয়ে থাকেন।
এতিমখানার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইফতারিতে প্রতিদিন খেজুর, কলা, আপেল, আনারস, বিস্কুট, সরবত অথবা জুস, ছোলা, বুন্দিয়া, চপ, বেগুনি, পেঁয়াজু, নুডলস দেওয়া হয়। রাতের খাবারে ভাতের সঙ্গে মুরগির মাংস, সবজি, ডাল দেওয়া হয়। বিশেষ বিশেষ দিনে গরুর মাংস ও মুরগির রোস্টের ব্যবস্থা থাকে।
মাদ্রাসা কমিটির পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও এতিমখানাটির তত্ত্বাবধায়ক প্রভাষক আব্দুস সবুর রহমান জানান, রোজার মাসে প্রতিদিন এতিম শিশুদের জন্য ইফতারি ও রাতের খাবার দেওয়া হয়। এ জন্য তারা আলোর পথে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এবং এলাকাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ।
ইফতারি ও রাতের খাবারের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছেন মাওঃ আক্তার হোসেন মন্ডল। তিনি বলেন, এতিম ও অতিদরিদ্র শিক্ষার্থীদের পাশে থাকতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। সমাজের কিছু হৃদয়বান মানুষেরা জন্য আমাদের কাজটা সহজ হয়েছে। তাদের প্রতি আমরা অকৃত্রিম ভালোবাসা, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।