সংবাদ শিরোনাম ::
তারেক রহমানের একত্রিশ দফার লিফলেট বিতরণ করেন আব্দুস সালাম তুহিন  চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ এর বিএনপির এমপি পদপ্রার্থী ইঞ্জিঃ মাসুদের বাড়ি -বাড়ি গিয়ে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ ভুয়া ফেসবুক পেইজে গুজব ছড়ানোর প্রতিবাদ মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাজনের সুশাসনের ডাক: রাজশাহী-৫ এ জামায়াত প্রার্থী নুরজ্জামান লিটনের গণসংযোগ ও সমাবেশ। গোদাগাড়ীতে আটক সোনার বারকে ঘিরে ধোঁয়াশা তানোরে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মিলন মেলা নাইস গার্ডেন পার্কে অনুষ্ঠিত হবে আপনারা সকলে আমন্ত্রিত! গোমস্তাপুর আড্ডা থেকে নিখোঁজের দেড় মাসেও সন্ধান মেলেনি আজাহারের রাজশাহী-৬: বিএনপির মনোনয়ন যুদ্ধে এগিয়ে কে? বিদ্যুৎ সার্কিটে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে জামায়াতের সহায়তা প্রদান 📰 রাজশাহী-৫ আসনে গণজোয়ার: বেলপুকুরে জামায়াত প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণা

রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের ৭১ শতাংশ এলাকায় পানির সংকট

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:২৩:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫ ১০৪ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সোহানুল হক পারভেজ রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান : রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির সংকট চরমে। একদিকে তাপপ্রবাহ, অন্যদিকে অস্বাভাবিক হারে নিচে নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানি। দুয়ে মিলে ভয়াবহ অবস্থা। গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, সাম্প্রতিক সময়ে কম বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি গত বছর বরেন্দ্র এলাকায় ৩টি কৃষি মৌসুমের পুরো চাষাবাদ হয়েছে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে। পানির স্তর অস্বাভাবিক নিচে নামার পাশাপাশি নির্বিচারে পানি তোলায় এ অঞ্চলে তাপপ্রবাহের সময়সীমা যেমন বেড়েছে, তেমনি কৃষি কাজে ব্যবহার ও খাওয়ার পানির সংকট তৈরি হয়েছে।

ওয়াটার রিসোর্স প্ল্যানিং অর্গানাইজেশনের (ওয়ারপো) গবেষণার তথ্যমতে, রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের ৭১ শতাংশ এলাকা মাঝারি, উচ্চ ও অতিউচ্চ পর্যায়ের পানি সংকটাপন্ন।

এতে আরও বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কম বৃষ্টিপাত, দীর্ঘস্থায়ী খরা ও ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর ক্রমশ নিচে নামছেই। গত গ্রীষ্মে রাজশাহীর তানোর এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমেছে ১১৩ ফুট পর্যন্ত। এর পুনর্ভরণ না হওয়ায় গড়ে এ অঞ্চলে ৪ ফুট করে নেমেছে পানির স্তর। সেই সঙ্গে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে তাপমাত্রা।

জানা গেছে, রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নে পানি সংকট সবচেয়ে বেশি। এখানকার বাসিন্দারা প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে পানি সংগ্রহ করছেন তাদের গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার ও খাওয়ার জন্য। একই চিত্র বাঘা উপজেলার কয়েকটি গ্রামে। টিউবওয়েল ও ডিপ টিউবওয়েল দিয়ে উঠছে না পানি। এসব গ্রামের মানুষকেও পানি সংগ্রহের জন্য ছুটতে হচ্ছে দূর-দূরান্তে।এদিকে, পানির অভাবে ও চৈত্রের খরতাপে কৃষি জমি ফেটে চৌচির। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় মিলছে না সেচও।

এলাকাবাসী জানায়, খাবার পানি ও ঘর গৃহস্থালির কাজের জন্য পানির সংকট চরমে। ফসলের ফলন নিয়েও শঙ্কার শেষ নেই তাদের।

তানোরের মাহালিপাড়ার বাসিন্দারা জানান, তীব্র গরম এমন যে, মনে হয় আগুনের হলকা শরীরে ফুটছে। তীব্র লোডশেডিং আর দাবদাহে ফসল নিয়ে শঙ্কার শেষ নেই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘অনাবৃষ্টি, তীব্র তাপপ্রবাহ ও প্রচণ্ড খরায় রাজশাহী অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে জ্যামিতিক হারে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে মাটির নিচে পানি পানি পাওয়া যাবে না।’

সমাধান হিসেবে তিনি বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলের সব বিল খনন করে পানির আধার তৈরি করতে হবে। ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ করলে ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমবে। অধিক সেচ-নির্ভর বোরোর পরিবর্তে কম সেচের ফসল আবাদ করতে হবে। বরেন্দ্র এলাকায় প্রচুর বৃক্ষ রোপণ করতে হবে, তাহলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত বাড়বে। বৃষ্টিপাত বাড়লে পানি পুনর্ভরণ হবে।’সমাধান হিসেবে তিনি বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলের সব বিল খনন করে পানির আধার তৈরি করতে হবে। ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ করলে ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমবে। অধিক সেচ-নির্ভর বোরোর পরিবর্তে কম সেচের ফসল আবাদ করতে হবে। বরেন্দ্র এলাকায় প্রচুর বৃক্ষ রোপণ করতে হবে, তাহলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত বাড়বে। বৃষ্টিপাত বাড়লে পানি পুনর্ভরণ হবে।’

গবেষণার তথ্যে বলা হয়, ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির গড় স্তর ছিল ২৬ ফুট নিচে। খাওয়ার পানি ছাড়াও কৃষিজমিতে সেচ এবং মাছ চাষে অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করায় ২০১০ সালে পানির গড় নিম্নস্তর ছিল ৫০ ফুট। ২০২১ সালেএ স্তর আরও নিচে নেমে দাঁড়ায় ৬০ ফুটে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের ৭১ শতাংশ এলাকায় পানির সংকট

আপডেট সময় : ০৪:২৩:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫

সোহানুল হক পারভেজ রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান : রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির সংকট চরমে। একদিকে তাপপ্রবাহ, অন্যদিকে অস্বাভাবিক হারে নিচে নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানি। দুয়ে মিলে ভয়াবহ অবস্থা। গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, সাম্প্রতিক সময়ে কম বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি গত বছর বরেন্দ্র এলাকায় ৩টি কৃষি মৌসুমের পুরো চাষাবাদ হয়েছে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে। পানির স্তর অস্বাভাবিক নিচে নামার পাশাপাশি নির্বিচারে পানি তোলায় এ অঞ্চলে তাপপ্রবাহের সময়সীমা যেমন বেড়েছে, তেমনি কৃষি কাজে ব্যবহার ও খাওয়ার পানির সংকট তৈরি হয়েছে।

ওয়াটার রিসোর্স প্ল্যানিং অর্গানাইজেশনের (ওয়ারপো) গবেষণার তথ্যমতে, রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের ৭১ শতাংশ এলাকা মাঝারি, উচ্চ ও অতিউচ্চ পর্যায়ের পানি সংকটাপন্ন।

এতে আরও বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কম বৃষ্টিপাত, দীর্ঘস্থায়ী খরা ও ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর ক্রমশ নিচে নামছেই। গত গ্রীষ্মে রাজশাহীর তানোর এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমেছে ১১৩ ফুট পর্যন্ত। এর পুনর্ভরণ না হওয়ায় গড়ে এ অঞ্চলে ৪ ফুট করে নেমেছে পানির স্তর। সেই সঙ্গে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে তাপমাত্রা।

জানা গেছে, রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নে পানি সংকট সবচেয়ে বেশি। এখানকার বাসিন্দারা প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে পানি সংগ্রহ করছেন তাদের গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার ও খাওয়ার জন্য। একই চিত্র বাঘা উপজেলার কয়েকটি গ্রামে। টিউবওয়েল ও ডিপ টিউবওয়েল দিয়ে উঠছে না পানি। এসব গ্রামের মানুষকেও পানি সংগ্রহের জন্য ছুটতে হচ্ছে দূর-দূরান্তে।এদিকে, পানির অভাবে ও চৈত্রের খরতাপে কৃষি জমি ফেটে চৌচির। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় মিলছে না সেচও।

এলাকাবাসী জানায়, খাবার পানি ও ঘর গৃহস্থালির কাজের জন্য পানির সংকট চরমে। ফসলের ফলন নিয়েও শঙ্কার শেষ নেই তাদের।

তানোরের মাহালিপাড়ার বাসিন্দারা জানান, তীব্র গরম এমন যে, মনে হয় আগুনের হলকা শরীরে ফুটছে। তীব্র লোডশেডিং আর দাবদাহে ফসল নিয়ে শঙ্কার শেষ নেই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘অনাবৃষ্টি, তীব্র তাপপ্রবাহ ও প্রচণ্ড খরায় রাজশাহী অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে জ্যামিতিক হারে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে মাটির নিচে পানি পানি পাওয়া যাবে না।’

সমাধান হিসেবে তিনি বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলের সব বিল খনন করে পানির আধার তৈরি করতে হবে। ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ করলে ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমবে। অধিক সেচ-নির্ভর বোরোর পরিবর্তে কম সেচের ফসল আবাদ করতে হবে। বরেন্দ্র এলাকায় প্রচুর বৃক্ষ রোপণ করতে হবে, তাহলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত বাড়বে। বৃষ্টিপাত বাড়লে পানি পুনর্ভরণ হবে।’সমাধান হিসেবে তিনি বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলের সব বিল খনন করে পানির আধার তৈরি করতে হবে। ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ করলে ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমবে। অধিক সেচ-নির্ভর বোরোর পরিবর্তে কম সেচের ফসল আবাদ করতে হবে। বরেন্দ্র এলাকায় প্রচুর বৃক্ষ রোপণ করতে হবে, তাহলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত বাড়বে। বৃষ্টিপাত বাড়লে পানি পুনর্ভরণ হবে।’

গবেষণার তথ্যে বলা হয়, ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির গড় স্তর ছিল ২৬ ফুট নিচে। খাওয়ার পানি ছাড়াও কৃষিজমিতে সেচ এবং মাছ চাষে অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করায় ২০১০ সালে পানির গড় নিম্নস্তর ছিল ৫০ ফুট। ২০২১ সালেএ স্তর আরও নিচে নেমে দাঁড়ায় ৬০ ফুটে।