নামে কামে ২ জন অধ্যক্ষ থাকায় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজে হযবরল অবস্থা

- আপডেট সময় : ০১:৫৩:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫ ৭৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ডিডিও ক্ষমতাসহ অধ্যক্ষ এজাবুল হক বুলি লাপাত্তা।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পদায়নকৃত ক্যাডার অধ্যক্ষ ঠুটো জগন্নাথের মত কলেজে কর্মরত-জরুরী ভিত্তিতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা
জেলা শহরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজে ২ জন অধ্যক্ষ গোপনে-প্রকাশ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করায় সৃষ্টি হয়েছে হযরবরল অবস্থা। এ কারণে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা পড়েছেন বিপাকে, কার্যক্রমে সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা। বিষয়টি জেলা প্রশাসনসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত থাকলেও কোন সুরাহা না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের মন্তব্য।
জানা গেছে, ২৪ এর জুলাই অভুত্থানের সময় থেকে কলেজে অনুপস্থিত রয়েছেন কলেজের সেই সময়ের প্রভাবশালী ও স্বেচ্ছাচারী, প্রতারক, চাঁদাবাজ, মামলাবাজ ও সন্ত্রাসী বলে খ্যাত অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক। তাকে এ সময় থেকেই বরখাস্ত করে নুতন অধ্যক্ষ পদায়নের দাবিতে শিক্ষক ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজ আন্দোলন শুরু করেন। সেই থেকে এজাবুল হক কলেজে অনুপস্থিত বা অনেকের ভাষায় পলাতক রয়েছেন।
এ অবস্থার প্রেক্ষিতে গত ১৪ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে এক আদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিসিএস ক্যাডার মোঃ মেসবাহুল আলমকে এ কলেজে পদায়ন করে। তিনি গত ১৭ নভেম্বর কলেজে যোগদান করেন। কলেজে যোগদান করার পর তাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকী দেয়া হয় যে, অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক বরখাস্ত বা ডিমোশন না হয়ে তিনি কেন এ কলেজে যোগদান করেন। তিনি বিষয়টিকে জটিল মনে করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লিখিত যোগাযোগ করে এর একটি সুরাহা দাবি করেন। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় আইনগত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাকে কলেজে উপস্থিত থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করার পরামর্শ প্রদান করে। সেই থেকে তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালনে কলেজের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। কলেজের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত ব্যাংকের একাউন্টও পরিবর্তন করা হয় নামে। কলেজের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, এ সময় একাউন্ট পরিবর্তন করা না হলে এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা বিপাকে পড়তেন। কারণ ফরম পূরণ সংক্রান্ত সকল লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমেই সম্পন্ন করা হয়।
এছাড়া কলেজের শিক্ষকদের ছুটি, প্রশিক্ষণজনিত প্রত্যয়ন, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রত্যয়নসহ কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি মোঃ মেসবাহুল আলম পরিচালনা করে আসছেন। তবে কলেজের অন্যান্য আর্থিক ক্ষমতা বিশেষ করে বেতন ফরোয়ার্ড করা, শ্রান্তি বিনোদন ভাতা অনুমোদন ও উন্নয়নমূলক কাজ করাসহ বেশ কিছু কাজ ডিডিও বা আর্থিক ক্ষমতায় ইএফটি এর মাধ্যমে করা হয়। এ বিষয়টি মূলত পাসওয়ার্ড ভিত্তিক বা টেকনিক্যাল। এটি অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক এর কাছে থাকায় তিনি পলাতক অবস্থায় বা আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকেই দখলে রেখেছেন। তিনি বাইরে থেকেই বেতন ফরোয়ার্ড করছেন। তবে অন্যান্য কার্যক্রম পরিকল্পনা ভিত্তিক হওয়ায় তিনি যেমন বাইরে থাকায় করতে পারছেননা, তেমনি কলেজে উপস্থিত অধ্যক্ষ মোঃ মেসবাহুল আলম ডিডিও/আর্থিক ক্ষমতা না পাওয়ায় তা করতে পারছেননা। এতে করে কলেজে বিভিন্ন বিষয়ে অচলাবস্থা ও হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিভিন্নভাবে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। এতে কলেজটি সব দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক ডিডিও ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়েই এমপিও এবং ইএফটি দুই একাউন্ট থেকেই অবৈধভাবে ১২ মাস দুটি বেতন উত্তোলন করেন। প্রায় এক বছর পর বিষয়টি বুঝতে পেরে জেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা তাকে বেতন ফেরত দিতে গত ১৬/০৮/২০২৩ তারিখে একটি চিঠি প্রেরণ করেন। অপরদিকে তিনি ডিডিও ক্ষমতা পেয়ে কয়েকজন শিক্ষকের বেতন সময়মত ফরোয়ার্ড না করে তাদের আর্থিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিলেন। এ বিষয়টি জেলা প্রশাসক, মাউশির মহাপরিচালক পর্যন্ত গড়ায় বলে কয়েকটি প্রমাণ পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য যে, কলেজের একজন মহিলা শিক্ষকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১১/০৮/২০২২ তারিখে জেলা শিক্ষা অফিসার তদন্ত করে জেলা প্রশাসককে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন, যেখানে অধ্যক্ষ হিসেবে মোঃ এজাবুল হককে অযোগ্য হিসেবে মন্তব্য/বর্ণনা করা হয়। এ কারণে আর্থিক ক্ষমতা তার কাছ থেকে পরিবর্তন করার দাবি জানিয়েছেন কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক।
উল্লেখ্য যে, বিগত সরকারের আমলে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক আওয়ামী সরকারের আমলে বেশ কিছু বিএনপি ও জামায়াত পন্থি শিক্ষকদের উপর মানসিক, শারীরিক, প্রশাসনিক, বেতন বন্ধ করাসহ বিভিন্ন নির্যাতন করে আসছিলেন। তারা আওয়ামী সরকারের আমলেই সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা ন্যায় বিচার পাননি। এদিকে সরকার পরিবর্তনের পর অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক এর বিরুদ্ধে কয়েকটি তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। সব কটি তদন্ত প্রতিবেদনই তার বিপক্ষে হলেও অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা।
একটি হত্যা মামলায় (মামলা নং-২৮, তারিখ ২৫/১২/২৪, বাৎসরিক মামলা-৬০৬) উচ্চ আদালতের নির্দেশে নি¤œ আদালতে জামিন নিতে গেলে গত ১০ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জজ আদালতের বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তার ৭ দিনের রিমাÐ চাওয়ায় এ মামলায় তাকে রিমান্ডও দেন বিচারক। গত ১৬ মার্চ বিকেল থেকে ১৮ মার্চ বিকেল পর্যন্ত তাকে ২ দিনের রিমাÐে নেয়া হয়। এর আগে থেকেই তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ফৌজদারী মামলা রয়েছে বলে একটি বিশেষ সূত্র দাবি করছে। এ মামলাগুলোর তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেয়া আছে বলে জানা যায়।
তিনি জুলাই আন্দোলনের পর থেকে পলাতক থাকলেও চাকরি টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির কার্যালয়ে তার নিয়মিত যোগাযোগ হয় বলে অপর একটি সূত্র দাবি করেছে। আওয়ামীলীগের আমলে ১০ বছর মোঃ আব্দুল ওদুদ এমপির পিএস হিসেবে কোটি কোটি টাকা অবৈধ আয় করে তিনি বাড়ি-গাড়িসহ গড়ে তুলেছেন একটি বড় নেটওয়ার্ক। তিনি টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন অফিস আদালতে, রাজনৈতিক নেতাদের কাছে তদ্বির করে তার অবস্থান এখনো ধরে রাখার চেষ্টা করছেন বলে অনেকে মন