স্টাফ রিপোর্টার
বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগে যোগদান করে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা বহু অপরাধের হোতা অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক জুলাই আন্দোলনের পর থেকে কলেজে অনুপস্থিত বা পলাতক থাকলেও এবং তিনি ফৌজদারী মামলায় হাজতবাস করলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আওয়ামীলীগের আমলের নির্যাতিত শিক্ষকরা অফিস অফিস ঘুরে বেড়ালেও অদ্যবধি অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কেন তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক বা বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছেনা ?-এ প্রশ্ন এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সর্বস্তরের জনগণের।
জানা গেছে, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ এনামুল হককে জোর করে সরিয়ে অবৈধ উপায়ে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের আমলে ২০১৪ সালে অধ্যক্ষ হয়েছিলেন মোঃ এজাবুল হক। চাকরী জীবনে তিনি মাঝে মধ্যে তার বিশাল বাহিনী নিয়ে কলেজে যেতেন এবং তিনি কখনো একটিও ক্লাস নেননি। শুধু রাজিৈনতক ফায়দা হাসিল করে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, চাকরীর প্রলোভনে লাখ লাখ টাকা আদায়সহ স্বেচ্ছাচারী কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি কখনো পেশাদার শিক্ষক হতে পারেননি বলে অধিকাংশ শিক্ষকের উপর ক্ষমতার স্টিম রোলার চালিয়ে নির্যাতন করতেন।
তিনি এ কলেজটিকে মাদক, ষড়যন্ত্র ও পাওনাদারদের আখড়া বানিয়েছিলেন। তার কারণে কলেজটি এখন অনেক সমস্যায় জর্জরিত। কারণ তিনি জুলাই আন্দোলনের পর থেকে অদ্যবধি কলেজে অনুপস্থিত থেকেও বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা তথ্য দিয়ে হাইকোর্টে রীট করে কলেজটিকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছেন। ফলে কলেজে চলছে হযবরল অবস্থা। জরুরী ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে কলেজের সার্বিক শৃ্খংলা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন বলে সুধীজনরা মনে করছেন। তার এবং কলেজের হযবরল অবস্থা বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে অনেকবার আবেদন দিয়েও কোন কাজ হয়নি বলে জানা গেছে।
অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক ফৌজদারী মামলার আসামী হওয়ায় গত ১০ মার্চ ২০২৫ থেকে দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। তাঁর ২ দিনের রিমান্তও হয়। সরকারী চাকরী বিধির ৪১ এর ২ ও ৩ ধারায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চালুসহ অন্যান্য সিদ্ধান্ত নেয়ার বিধান থাকলেও অদ্যবধি শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তবে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৪/২/২০২৫ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শাহিনা পারভিন স্বাক্ষরিত এক পত্রে অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হককে ৫ আগস্টের পর থেকে কলেজে অনুপস্থিত থাকাসহ ১০টি বিষয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয় এবং ১০ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হলেও অদ্যবধি তিনি সে জবাব না দিয়ে গা ঢাকা দিয়ে আছেন।
জুলাই আন্দোলনের সময় থেকে অধ্যক্ষ এজাবুল হক এর অপসারণ দাবি করে শিক্ষার্থীরা মানব বন্ধন, মিছিল ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এদিকে অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক বুলির বিরুদ্ধে কয়েকটি তদন্ত হলেও তিনি একটিতেও উপস্থিত হননি। এদিন গত ২৭ নভেম্বর ২০২৪ অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে প্লাকার্ড ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে তদন্ত টিমের সামনেই শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচী পালন করে, যার সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
কলেজের শিক্ষকরা জানিয়েছেন তিনি বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসনকে না জানিয়ে টেন্ডার ছাড়া অবৈধভাবে কলেজের ৭/৮টি ফলজ ও বনজ গাছ কর্তন করেছেন, যার প্রমাণ শিক্ষকরা সংরক্ষণ করেছেন।
এমপিও এবং ইএফটি উভয় একাউন্ট থেকে ১ বছরের বেতন তুলে আত্মসাতের চেষ্টা করেছিলেন যার প্রমাণও নির্যাতিত শিক্ষকদের কাছে রয়েছে।
একজন মহিলা শিক্ষকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২০২২ সালের তদন্ত প্রতিবেদনে অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হককে অযোগ্য অধ্যক্ষ হিসেবে জেলা শিক্ষা অফিসারের প্রতিবেদন দাখিল হলেও অজ্ঞাত কারণে জেলা প্রশাসন আজো কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত তিনি মহারাজপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান থাকাকালে অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ইউপি সদস্যরা তার বিরুদ্ধে অনাস্থা দেয়ায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। তার এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করেন তৎকালীন ডিডিএলজি তাজকির-উজজামান এবং তিনি অভিযোগের সত্যতার বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ২০২০ সালে পাঠালেও আজো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি, যে কারণে মহারাজপুর ইউনিয়নের জনগণ সরকারের উপর তখন থেকেই ক্ষিপ্ত রয়েছেন। আত্মসাৎ করা সরকারের প্রায় অর্ধ কোটি টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার আইন থাকলেও আজো জমা করা হয়নি বলে জানা গেছে।
কলেজ সরকারীকরণের সময় লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি, শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করা, মহিলা শিক্ষকদের প্রতি বিভিন্ন নির্যাতন ও ইভটিজিং, শিক্ষকদের চাকরী খেয়ে নেয়ার ভয়ভীতি দেখানো, অসৎ উদ্দেশ্যে ছাত্র হোস্টেল বন্ধ করে দেয়াসহ তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন থাকায় কলেজ, কলেজের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলেছে। জুলাই আন্দোলনের আগে থেকেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয় ডজনেরও অধিক।
উল্লেখ্য যে, সরকারিকৃত কলেজের চাকরী বদলীযোগ্য না হওযায় এবং অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক এর চাকরীকালীন বিষয় গণিত এর পদ সরকারীকরণের সময় সৃষ্ট হয়নি বলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্ধীন এক কর্মকর্তা মৌখিকভাবে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
আগামী ২৬/৬/২৫ তারিখ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। এ সময় প্রতি বছর বিদায়-বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকলেও এ বছর এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ না থাকায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষক ও প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।