সংবাদ শিরোনাম ::
তারেক রহমানের একত্রিশ দফার লিফলেট বিতরণ করেন আব্দুস সালাম তুহিন  চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ এর বিএনপির এমপি পদপ্রার্থী ইঞ্জিঃ মাসুদের বাড়ি -বাড়ি গিয়ে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ ভুয়া ফেসবুক পেইজে গুজব ছড়ানোর প্রতিবাদ মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাজনের সুশাসনের ডাক: রাজশাহী-৫ এ জামায়াত প্রার্থী নুরজ্জামান লিটনের গণসংযোগ ও সমাবেশ। গোদাগাড়ীতে আটক সোনার বারকে ঘিরে ধোঁয়াশা তানোরে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মিলন মেলা নাইস গার্ডেন পার্কে অনুষ্ঠিত হবে আপনারা সকলে আমন্ত্রিত! গোমস্তাপুর আড্ডা থেকে নিখোঁজের দেড় মাসেও সন্ধান মেলেনি আজাহারের রাজশাহী-৬: বিএনপির মনোনয়ন যুদ্ধে এগিয়ে কে? বিদ্যুৎ সার্কিটে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে জামায়াতের সহায়তা প্রদান 📰 রাজশাহী-৫ আসনে গণজোয়ার: বেলপুকুরে জামায়াত প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণা

তানোরে ধানের গোলা ও মিল বিলুপ্ত,ধান বিক্রি করে চাল কিনে খাচ্ছেন কৃষকরা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৩৮:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫ ১৯ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

সোহানুল হক পারভেজ রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান : রাজশাহীর তানোরের ঐতিহ্যবাহী ধানের গোলা ও ধান ভাঙ্গানো মিল এখন বিলুপ্ত। ফলে, জমি থেকেই ধান বিক্রি করে চাল কিনে খেতে হচ্ছে কৃষকদের। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইচ্ছে মত চালের দাম কম বেশী করছেন মজুদদার ও ব্যবসায়ীরা বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এক সময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে ধান রাখার জন্য এই গোলা ও পাড়া মহল্লায় দেখা যেত ধান ভাঙ্গানো মিল। একই ভাবে অনেক বাড়িতে দেখা যেত ধান ও আটা কুটার ঠেঁকি। গোলায় রাখা ধান যখন ইচ্ছে বের করে চাল তৈরি ও বাজারে বিক্রি করতেন কৃষকরা। যা এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না।

কৃষকরা বলছেন, আধুনিকতার ছোঁয়ায় এবং জায়গার অভাবে এবং ধান ভাঙ্গানো মিল না থাকার কারণে কৃষকরা এখন ধানের গোলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। কালের আবর্তে ধান সংরক্ষনের জায়গা না থাকায় অধিকাংশ কৃষক তাদের ধান জমি থেকেই বিক্রি করে দিয়ে বাজার থেকে অটো মিলের বস্তা বন্দী চাল কিনে খাচ্ছেন। ফলে, কৃষকদের ঘরে এখন আর তেমন ধান ও চাল মজুদ থাকেনা। অতীতে, গোলাভরা ধান মানেই ছিল সচ্ছলতা এবং সম্মান। বিয়ের সময় পাত্রের পরিবার ধানের গোলা ও খড়ের পালার দিকে তাকিয়ে কন্যার পরিবারকে নির্বাচন করতেন। কিন্তু বর্তমানে মাঠ ভরা সোনালী ধান থাকলেও নেই গোলা ও গোলা ভরা ধান এবং খৈলান (উঠান) ভরা খড়।
তানোরে গ্রাম অঞ্চলের বাড়ির উঠানে ধানের গোলা ও খড়ের পালা এবং ধান ভাঙ্গানো মিল ও ঠেঁকি যা একসময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও কৃষকের সমৃদ্ধির প্রতীক ছিল, তা এখন বিলুপ্ত হওয়ায় ইতিহাস হতে চলেছে। ৯০ এর দশকের পর আধুনিকতার ছোঁয়ায় যুগের পরিবর্তন ও কালের আবর্তে বদলে গেছে গ্রামের দৃশ্যপট। ধানের গোলা সাধারণত বাঁশ ও কাদা মাটি দিয়ে তৈরি করা হতো। ধান কাটার পর শুকিয়ে গোলার ভেতর রাখা হতো এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বের করে ব্যবহার করা হতো। তবে, সময়ের পরিবর্তনে আধুনিক শস্য সংরক্ষণের পদ্ধতি আসায় এবং জায়গা সাশ্রয়ের জন্য কৃষকরা ধানের গোলা থেকে দূরে সরে গেছে বলেও জানান কৃষকরা।এবিষয়ে জানতে চাইলে তানোর সদর গ্রামের খোদা বাক্স মেম্বারের পুত্র মনজুর রহমান বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন দেখেছি আমাদের বাড়ির আঙ্গিনায় ছোট বড় বেশ কয়েকটি ধানের গোলা এবং খৈলানে বিশাল বড় বড় খড়ের পালা। কিন্তু পিতার মৃত্যুর পর ভাইয়েরা সবাই আলাদা আলাদা সংসার করায় এখন সেগুলো আর নেই। ধান মড়াইয়ের পরপরই খৈলান (উঠান) এবং জমি থেকেই ধান বিক্রি করে বাজার থেকে অটো মিলের বস্তা বন্দী চাল কিনে খাচ্ছেন বলেও জানান তিনি। তানোর পৌর এলাকার ধানতৈড় গ্রামের আদর্শ কৃষক আশরাফুল আলম বলেন, আমাদের বাড়ির আঙ্গিনায় ধানের গোলা ছিলো এখন আর নেই। ভাইয়ের সংসার আলাদা করতে ভাঙ্গতে হয়েছে ধানের গোলা।তানোর পৌর এলাকার ধানতৈড় গ্রামের আবু তালহা রানা থানাা মোড়ের মদিনা ফার্মেসীর মালিক বলেন, আমাদের বাড়িতে এখনো ধানের গোলা রয়েছে, কিন্তু এখন আর ব্যবহার করা হয় না। তিনি বলেন, আমাদের সবগুলো জমি বছর চুক্তিতে টাকার বিনিময়ে লীজ দেয়া আছে। বাজার থেকে বস্তা বন্দী চাল কিনে খাচ্ছেন বলেও জানান তিনি। তানোর গোল্লা পাড়া মহল্লার স্টুডিও ও ফটো কপি ব্যবসায়ী রুস্তম আলী বলেন, আগে গ্রামের গৃহস্থের বাড়ির আঙ্গিনায় ধানের গোলা ও ঠেঁকি এবং খৈলানে খড়ের পালা দেখা যেত। একই সাথে গ্রামে গ্রামে ধান ভাঙ্গানো মিলও দেখা যেত, যা এখন আর দেখা যাচ্ছে না। ফলে, বিলুপ্ত হয়ে গেছে ধানের গোলা ও এর ব্যবহার বলেও জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

তানোরে ধানের গোলা ও মিল বিলুপ্ত,ধান বিক্রি করে চাল কিনে খাচ্ছেন কৃষকরা

আপডেট সময় : ১১:৩৮:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

 

সোহানুল হক পারভেজ রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান : রাজশাহীর তানোরের ঐতিহ্যবাহী ধানের গোলা ও ধান ভাঙ্গানো মিল এখন বিলুপ্ত। ফলে, জমি থেকেই ধান বিক্রি করে চাল কিনে খেতে হচ্ছে কৃষকদের। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইচ্ছে মত চালের দাম কম বেশী করছেন মজুদদার ও ব্যবসায়ীরা বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এক সময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে ধান রাখার জন্য এই গোলা ও পাড়া মহল্লায় দেখা যেত ধান ভাঙ্গানো মিল। একই ভাবে অনেক বাড়িতে দেখা যেত ধান ও আটা কুটার ঠেঁকি। গোলায় রাখা ধান যখন ইচ্ছে বের করে চাল তৈরি ও বাজারে বিক্রি করতেন কৃষকরা। যা এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না।

কৃষকরা বলছেন, আধুনিকতার ছোঁয়ায় এবং জায়গার অভাবে এবং ধান ভাঙ্গানো মিল না থাকার কারণে কৃষকরা এখন ধানের গোলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। কালের আবর্তে ধান সংরক্ষনের জায়গা না থাকায় অধিকাংশ কৃষক তাদের ধান জমি থেকেই বিক্রি করে দিয়ে বাজার থেকে অটো মিলের বস্তা বন্দী চাল কিনে খাচ্ছেন। ফলে, কৃষকদের ঘরে এখন আর তেমন ধান ও চাল মজুদ থাকেনা। অতীতে, গোলাভরা ধান মানেই ছিল সচ্ছলতা এবং সম্মান। বিয়ের সময় পাত্রের পরিবার ধানের গোলা ও খড়ের পালার দিকে তাকিয়ে কন্যার পরিবারকে নির্বাচন করতেন। কিন্তু বর্তমানে মাঠ ভরা সোনালী ধান থাকলেও নেই গোলা ও গোলা ভরা ধান এবং খৈলান (উঠান) ভরা খড়।
তানোরে গ্রাম অঞ্চলের বাড়ির উঠানে ধানের গোলা ও খড়ের পালা এবং ধান ভাঙ্গানো মিল ও ঠেঁকি যা একসময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও কৃষকের সমৃদ্ধির প্রতীক ছিল, তা এখন বিলুপ্ত হওয়ায় ইতিহাস হতে চলেছে। ৯০ এর দশকের পর আধুনিকতার ছোঁয়ায় যুগের পরিবর্তন ও কালের আবর্তে বদলে গেছে গ্রামের দৃশ্যপট। ধানের গোলা সাধারণত বাঁশ ও কাদা মাটি দিয়ে তৈরি করা হতো। ধান কাটার পর শুকিয়ে গোলার ভেতর রাখা হতো এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বের করে ব্যবহার করা হতো। তবে, সময়ের পরিবর্তনে আধুনিক শস্য সংরক্ষণের পদ্ধতি আসায় এবং জায়গা সাশ্রয়ের জন্য কৃষকরা ধানের গোলা থেকে দূরে সরে গেছে বলেও জানান কৃষকরা।এবিষয়ে জানতে চাইলে তানোর সদর গ্রামের খোদা বাক্স মেম্বারের পুত্র মনজুর রহমান বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন দেখেছি আমাদের বাড়ির আঙ্গিনায় ছোট বড় বেশ কয়েকটি ধানের গোলা এবং খৈলানে বিশাল বড় বড় খড়ের পালা। কিন্তু পিতার মৃত্যুর পর ভাইয়েরা সবাই আলাদা আলাদা সংসার করায় এখন সেগুলো আর নেই। ধান মড়াইয়ের পরপরই খৈলান (উঠান) এবং জমি থেকেই ধান বিক্রি করে বাজার থেকে অটো মিলের বস্তা বন্দী চাল কিনে খাচ্ছেন বলেও জানান তিনি। তানোর পৌর এলাকার ধানতৈড় গ্রামের আদর্শ কৃষক আশরাফুল আলম বলেন, আমাদের বাড়ির আঙ্গিনায় ধানের গোলা ছিলো এখন আর নেই। ভাইয়ের সংসার আলাদা করতে ভাঙ্গতে হয়েছে ধানের গোলা।তানোর পৌর এলাকার ধানতৈড় গ্রামের আবু তালহা রানা থানাা মোড়ের মদিনা ফার্মেসীর মালিক বলেন, আমাদের বাড়িতে এখনো ধানের গোলা রয়েছে, কিন্তু এখন আর ব্যবহার করা হয় না। তিনি বলেন, আমাদের সবগুলো জমি বছর চুক্তিতে টাকার বিনিময়ে লীজ দেয়া আছে। বাজার থেকে বস্তা বন্দী চাল কিনে খাচ্ছেন বলেও জানান তিনি। তানোর গোল্লা পাড়া মহল্লার স্টুডিও ও ফটো কপি ব্যবসায়ী রুস্তম আলী বলেন, আগে গ্রামের গৃহস্থের বাড়ির আঙ্গিনায় ধানের গোলা ও ঠেঁকি এবং খৈলানে খড়ের পালা দেখা যেত। একই সাথে গ্রামে গ্রামে ধান ভাঙ্গানো মিলও দেখা যেত, যা এখন আর দেখা যাচ্ছে না। ফলে, বিলুপ্ত হয়ে গেছে ধানের গোলা ও এর ব্যবহার বলেও জানান তিনি।