সংবাদ শিরোনাম ::
তারেক রহমানের একত্রিশ দফার লিফলেট বিতরণ করেন আব্দুস সালাম তুহিন  চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ এর বিএনপির এমপি পদপ্রার্থী ইঞ্জিঃ মাসুদের বাড়ি -বাড়ি গিয়ে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ ভুয়া ফেসবুক পেইজে গুজব ছড়ানোর প্রতিবাদ মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাজনের সুশাসনের ডাক: রাজশাহী-৫ এ জামায়াত প্রার্থী নুরজ্জামান লিটনের গণসংযোগ ও সমাবেশ। গোদাগাড়ীতে আটক সোনার বারকে ঘিরে ধোঁয়াশা তানোরে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মিলন মেলা নাইস গার্ডেন পার্কে অনুষ্ঠিত হবে আপনারা সকলে আমন্ত্রিত! গোমস্তাপুর আড্ডা থেকে নিখোঁজের দেড় মাসেও সন্ধান মেলেনি আজাহারের রাজশাহী-৬: বিএনপির মনোনয়ন যুদ্ধে এগিয়ে কে? বিদ্যুৎ সার্কিটে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে জামায়াতের সহায়তা প্রদান 📰 রাজশাহী-৫ আসনে গণজোয়ার: বেলপুকুরে জামায়াত প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণা

অধ্যক্ষ এজাবুল হক বুলির চাঁদাাবাজির কল রেকর্ড ফাঁস-তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি

স্টাফ রিপোর্টারঃ
  • আপডেট সময় : ০৮:২৬:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫ ৮৭ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জেলা শহরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক বুলির বেপরোয়া চাঁদাাবাজির একটি কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে।

ঈযধঢ়ধরহবংি২৪.পড়স ছাড়াও আরো কয়েকটি ফেইস বুক পেইজে প্রকাশিত কল রেকর্ডে শোনা যাচ্ছে, তিনি একজন শিক্ষিকার কাছ থেকে চাঁদা নেয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশলে তাকে চাপ সৃষ্টি করছেন। শিক্ষিকা চাঁদা দিতে অস্বীকার করার চেষ্টা করলে অধ্যক্ষ তাকে ৫ জন ছাড়া অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীরা সব টাকা দিয়ে দিয়েছেন বলে উদাহরণ দিয়ে তাকে তার নিয়মিত আদায় করা চাঁদা কলেজে গিয়ে জেনে নিয়ে দিতে বলছেন। অধ্যক্ষ বলছেন, অর্ডিট করতে এক মাসের বেতনের সব টাকা দিতে হয়, তাই দিতে হয়। শিক্ষিকা বিভিন্ন প্রকার অনুনয় করে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি তা মানতেই রাজি নন।

অধ্যক্ষ বুঝাতে চাচ্ছেন যে, তিনি এসব টাকার একটিও নিজে ভোগ করেননা, শুধু সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোয় ঘুষ দিতে হয়। তিনি এও বলেন যে, আমি উৎসাহিত (কলেজ জাতীয়করণ কাজে) ছিলাম না। আপনারা বার বার আমাকে উৎসাহিত করেছেন। এই মহিলা শিক্ষকের সাথে অধ্যক্ষের কথোপকথনে প্রমাণিত হয় যে, তিনি জাতীয়করণের নামে বিভিন্ন কৌশলে ব্যাপক চাঁদাবাজি করেছেন।

আর একজন শিক্ষক সরাসরি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্নসচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছেন। সেখানে সেই কর্মকর্তা বলছেন যে, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজের কাজের জন্য কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকার অর্থ নেয়না। অথচ তাদের নামে এই অধ্যক্ষ লাখ লাখ টাকা অবৈধভাবে উত্তোলন করেছেন বলে আমরা শুনেছি। কর্মকর্তার কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, এই লোক (অধ্যক্ষ) ১১৪ নম্বরের লোক। অপর কণ্ঠে থেকে তখন শোনা যায়, তার দুর্নীতির কোনো নম্বরই নেই, ইত্যাদি। তাই অধ্যক্ষের চাঁদাবাজির বিষয়ে তিনি সিনিয়র সচিব বরাবর অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে বলেন এই শিক্ষককে। এই শিক্ষক অধ্যক্ষের অনিয়ম ও চাঁদাবাজিগিরির বিষয়ে তার সাথে ঘটে যাওয়া তথ্য তুলে ধরে তার কাগজ আটকিয়ে দিয়ে অধ্যক্ষ ২৫ হাজারসহ আরো অনেক টাকা আদায় করার কথা স্বীকার করেছেন। এরপর আর একজন শিক্ষকের কণ্ঠে শোনা যায়, অধ্যক্ষ এজাবুল হক কলেজের চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। তিনি বলছেন যে, প্রাথমিক পর্যায়ে সবাই অধ্যক্ষকে টাকা দিয়েছেন। আর প্রতি মাসেই কয়েবার করে শিক্ষকদের কাছে টাকা তুলছেন অধ্যক্ষ। অধ্যক্ষ ঢাকায় বা আড়ালে বসে নিজে নিজে ভৌতিক গল্প বানায় আর বিভিন্ন ইস্যু তৈরী করে শিক্ষক-কর্মচারীদের বাধ্য করেন টাকা দিতে। জাতীয়করণের মাঝ পথেই এই শিক্ষকের কাছ থেকে ৪০ হাজার করে টাকা তোলা হয়ে গেছে বলে তিনি স্বীকার করে অন্যান্যদের কাছে আরো বেশি টাকা নিচ্ছেন আর সামনেতো সময় পড়েই আছে, কত টাকা যে আদায় করবেন, তার হিসেব নেই এমন মন্তব্য করেছেন সেই শিক্ষক।

এই অডিওর সূত্র ধরে কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষিকা জানান, অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক কলেজের শিক্ষকদের কাজে ঢাকা যাবেন বলে ২০২১ সাল থেকে বহুবার জোর করে, কখনো কৌশল করে লাখ লাখ টাকা যার পরিমাণ ৫০ লাখ টাকাও হতে পারে, যা চাঁদা হিসেবে আদায় করেন। এই কল রেকর্ডে ৫ জনের কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে। যারা সবাই অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক এর বাধ্যতামূলক চাঁদা আদায়ের শিকার।

এরপরে আরো ২ জন শিক্ষক/কর্মচারীর কথায় প্রমাণিত হয় যে, অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক জাতীয়করণের নামে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন অবৈধ বা অনৈতিকভাবে। এ কলেজের ৩৪ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে অধ্যক্ষের স্বীকারোক্তিতেই প্রমাণ হয় যে, তিনি ৫/৬ জন বাদ দিয়ে সবার কাছ থেকেই নিয়মিত চাঁদা পেয়ে আসছেন, যদিও পরে এই ৫/৬ জনও তাদের ভাগের সমস্ত টাকাই দিয়েছেন অধ্যক্ষকে ।

অবৈধ ও অনৈতিকভাবে চাঁদাবাজির এ প্রমাণগুলো প্রতিষ্ঠান পরিপন্থি কাজ। এসব অপরাধের শাস্তি না হলে প্রাতিষ্ঠানিক অপরাধগুলো আরো বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন। তাই এই অধ্যক্ষের ফাঁস হওয়া কল রেকর্ড এর ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় তদন্ত সাপেক্ষে জরুরী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীসহ অডিও শ্রবণকারী সবাই চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য যে, অধ্যক্ষ এজাবুল হক বুলি গত ২৪ এর ৫ আগস্টের পর কলেজে অনুপস্থিত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ইভটিজিং, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জীবন নাশের হুমকীসহ নানা বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর আদেশে রাজশাহী মাউশির পরিচালকের নেতৃত্বে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ও ২৭ নভেম্বর দুটি তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। তদন্তে তার দোষ প্রমাণিত হওয়ায় গত ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাকে একটি কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়। ১০টি প্রমাণিত অভিযোগের জবাব দেয়ার জন্য তাকে ১০ দিন সময় দেয়া হয়। কিন্তু তিনি অদ্যবধি সে নোটিশের জবাব না দিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে অপরাধ ঢাঁকার কুট কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে গত ১০ মার্চ অধ্যক্ষ এজাবুল হক বুলি একটি হত্যা মামলায় গত ১০ মার্চ ২০২৫ তারিখে জেল হাজতে যান। দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর হাইকোর্ট থেকে জামিনলাভ করেন। সরকারি চাকরী বিধিতে কোন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ফৌজদারী মামলার আসামী হলে এবং হাজতবাস করলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হওয়াসহ তিনি সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার বিধান আছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সেই তথ্য সরবরাহ না করায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে গত ২৬/৪/২০২৫ তারিখে অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক এর বিরুদ্ধে কলেজের বাংলা বিষয়ের প্রভাষক মোহাঃ জোনাব আলীর মাউশির মহাপরিচালক বরাবর দেয়া প্রায় ডজনখানেক অভিযোগ এর তথ্য প্রমাণের প্রেক্ষিতে গত ৪/৫/২০২৫ তারিখ মাউশির মহাপরিচালক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে অধ্যক্ষ এজাবুল হকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি প্রেরণ করেন।

আরো উল্লে¬খ্য যে, অধ্যক্ষ এজাবুল হক পলাতক থাকায় কলেজ পরিচালনা স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে গত ১৪/১১/২০২৪ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মোঃ মেসবাহুল আলম নামে একজন অধ্যাপককে এ কলেজে পদায়ন করা হয়। তিনি ১৭ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে যোগদান করে গত ২০ মে ২০২৫ পর্যন্ত এ কলেজে কার্যক্রম পরিচালনা করে আব্দুলপুর সরকারি কলেজে গত ২১ মে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। এই অধ্যক্ষকে কলেজ থেকে তাড়ানোর জন্য তিনি পলাতক অবস্থায় তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রীট করেন।
এরপর থেকে এ কলেজটি অভিভাবকহীন ভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তবে প্রায় এক বছর পর সম্প্রতি একজন রাজনৈতিক নেতার ছত্রচ্ছায়ায় অধ্যক্ষ এজাবুল হক মাঝে মধ্যে কলেজে প্রবেশ করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত তিনি তার অফিস কক্ষ খোলার অনুমতি না পাওয়ায় যত্রতত্র বসে অফিস করেন। বৈষম্য বিরোধী ও কলেজের শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে তার পদত্যাগের দাবিতে জুলাই আন্দোলনকালীন সময়ে পলাতক থাকায় অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দিয়ে মিছিল সহকারে জেলা প্রশাসক এর দপ্তরে গিয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খানের কাছে সেই চাবি জমা দেন বলে জানা যায়। পদায়নকৃত অধ্যক্ষ মোঃ মেসবাহুল আলম ১৭ নভেম্বর ২০২৪ থেকে ২০ মে ২০২৫ পর্যন্ত কলেজে দায়িত্ব পালন করলেও তিনিও ডিসি অফিসে আবেদন দিয়েও অফিস কক্ষ খুলতে পারেননি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা মাউশি থেকে এ বিষয়ে লিখিত নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত অফিস খোলা ফৌজদারী অপরাধ হওয়ায় না খোলাই উত্তম।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

অধ্যক্ষ এজাবুল হক বুলির চাঁদাাবাজির কল রেকর্ড ফাঁস-তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি

আপডেট সময় : ০৮:২৬:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫

জেলা শহরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক বুলির বেপরোয়া চাঁদাাবাজির একটি কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে।

ঈযধঢ়ধরহবংি২৪.পড়স ছাড়াও আরো কয়েকটি ফেইস বুক পেইজে প্রকাশিত কল রেকর্ডে শোনা যাচ্ছে, তিনি একজন শিক্ষিকার কাছ থেকে চাঁদা নেয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশলে তাকে চাপ সৃষ্টি করছেন। শিক্ষিকা চাঁদা দিতে অস্বীকার করার চেষ্টা করলে অধ্যক্ষ তাকে ৫ জন ছাড়া অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীরা সব টাকা দিয়ে দিয়েছেন বলে উদাহরণ দিয়ে তাকে তার নিয়মিত আদায় করা চাঁদা কলেজে গিয়ে জেনে নিয়ে দিতে বলছেন। অধ্যক্ষ বলছেন, অর্ডিট করতে এক মাসের বেতনের সব টাকা দিতে হয়, তাই দিতে হয়। শিক্ষিকা বিভিন্ন প্রকার অনুনয় করে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি তা মানতেই রাজি নন।

অধ্যক্ষ বুঝাতে চাচ্ছেন যে, তিনি এসব টাকার একটিও নিজে ভোগ করেননা, শুধু সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোয় ঘুষ দিতে হয়। তিনি এও বলেন যে, আমি উৎসাহিত (কলেজ জাতীয়করণ কাজে) ছিলাম না। আপনারা বার বার আমাকে উৎসাহিত করেছেন। এই মহিলা শিক্ষকের সাথে অধ্যক্ষের কথোপকথনে প্রমাণিত হয় যে, তিনি জাতীয়করণের নামে বিভিন্ন কৌশলে ব্যাপক চাঁদাবাজি করেছেন।

আর একজন শিক্ষক সরাসরি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্নসচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছেন। সেখানে সেই কর্মকর্তা বলছেন যে, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজের কাজের জন্য কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকার অর্থ নেয়না। অথচ তাদের নামে এই অধ্যক্ষ লাখ লাখ টাকা অবৈধভাবে উত্তোলন করেছেন বলে আমরা শুনেছি। কর্মকর্তার কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, এই লোক (অধ্যক্ষ) ১১৪ নম্বরের লোক। অপর কণ্ঠে থেকে তখন শোনা যায়, তার দুর্নীতির কোনো নম্বরই নেই, ইত্যাদি। তাই অধ্যক্ষের চাঁদাবাজির বিষয়ে তিনি সিনিয়র সচিব বরাবর অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে বলেন এই শিক্ষককে। এই শিক্ষক অধ্যক্ষের অনিয়ম ও চাঁদাবাজিগিরির বিষয়ে তার সাথে ঘটে যাওয়া তথ্য তুলে ধরে তার কাগজ আটকিয়ে দিয়ে অধ্যক্ষ ২৫ হাজারসহ আরো অনেক টাকা আদায় করার কথা স্বীকার করেছেন। এরপর আর একজন শিক্ষকের কণ্ঠে শোনা যায়, অধ্যক্ষ এজাবুল হক কলেজের চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। তিনি বলছেন যে, প্রাথমিক পর্যায়ে সবাই অধ্যক্ষকে টাকা দিয়েছেন। আর প্রতি মাসেই কয়েবার করে শিক্ষকদের কাছে টাকা তুলছেন অধ্যক্ষ। অধ্যক্ষ ঢাকায় বা আড়ালে বসে নিজে নিজে ভৌতিক গল্প বানায় আর বিভিন্ন ইস্যু তৈরী করে শিক্ষক-কর্মচারীদের বাধ্য করেন টাকা দিতে। জাতীয়করণের মাঝ পথেই এই শিক্ষকের কাছ থেকে ৪০ হাজার করে টাকা তোলা হয়ে গেছে বলে তিনি স্বীকার করে অন্যান্যদের কাছে আরো বেশি টাকা নিচ্ছেন আর সামনেতো সময় পড়েই আছে, কত টাকা যে আদায় করবেন, তার হিসেব নেই এমন মন্তব্য করেছেন সেই শিক্ষক।

এই অডিওর সূত্র ধরে কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষিকা জানান, অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক কলেজের শিক্ষকদের কাজে ঢাকা যাবেন বলে ২০২১ সাল থেকে বহুবার জোর করে, কখনো কৌশল করে লাখ লাখ টাকা যার পরিমাণ ৫০ লাখ টাকাও হতে পারে, যা চাঁদা হিসেবে আদায় করেন। এই কল রেকর্ডে ৫ জনের কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে। যারা সবাই অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক এর বাধ্যতামূলক চাঁদা আদায়ের শিকার।

এরপরে আরো ২ জন শিক্ষক/কর্মচারীর কথায় প্রমাণিত হয় যে, অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক জাতীয়করণের নামে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন অবৈধ বা অনৈতিকভাবে। এ কলেজের ৩৪ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে অধ্যক্ষের স্বীকারোক্তিতেই প্রমাণ হয় যে, তিনি ৫/৬ জন বাদ দিয়ে সবার কাছ থেকেই নিয়মিত চাঁদা পেয়ে আসছেন, যদিও পরে এই ৫/৬ জনও তাদের ভাগের সমস্ত টাকাই দিয়েছেন অধ্যক্ষকে ।

অবৈধ ও অনৈতিকভাবে চাঁদাবাজির এ প্রমাণগুলো প্রতিষ্ঠান পরিপন্থি কাজ। এসব অপরাধের শাস্তি না হলে প্রাতিষ্ঠানিক অপরাধগুলো আরো বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন। তাই এই অধ্যক্ষের ফাঁস হওয়া কল রেকর্ড এর ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় তদন্ত সাপেক্ষে জরুরী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীসহ অডিও শ্রবণকারী সবাই চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য যে, অধ্যক্ষ এজাবুল হক বুলি গত ২৪ এর ৫ আগস্টের পর কলেজে অনুপস্থিত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ইভটিজিং, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জীবন নাশের হুমকীসহ নানা বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর আদেশে রাজশাহী মাউশির পরিচালকের নেতৃত্বে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ও ২৭ নভেম্বর দুটি তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। তদন্তে তার দোষ প্রমাণিত হওয়ায় গত ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাকে একটি কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়। ১০টি প্রমাণিত অভিযোগের জবাব দেয়ার জন্য তাকে ১০ দিন সময় দেয়া হয়। কিন্তু তিনি অদ্যবধি সে নোটিশের জবাব না দিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে অপরাধ ঢাঁকার কুট কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে গত ১০ মার্চ অধ্যক্ষ এজাবুল হক বুলি একটি হত্যা মামলায় গত ১০ মার্চ ২০২৫ তারিখে জেল হাজতে যান। দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর হাইকোর্ট থেকে জামিনলাভ করেন। সরকারি চাকরী বিধিতে কোন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ফৌজদারী মামলার আসামী হলে এবং হাজতবাস করলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হওয়াসহ তিনি সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার বিধান আছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সেই তথ্য সরবরাহ না করায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে গত ২৬/৪/২০২৫ তারিখে অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক এর বিরুদ্ধে কলেজের বাংলা বিষয়ের প্রভাষক মোহাঃ জোনাব আলীর মাউশির মহাপরিচালক বরাবর দেয়া প্রায় ডজনখানেক অভিযোগ এর তথ্য প্রমাণের প্রেক্ষিতে গত ৪/৫/২০২৫ তারিখ মাউশির মহাপরিচালক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে অধ্যক্ষ এজাবুল হকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি প্রেরণ করেন।

আরো উল্লে¬খ্য যে, অধ্যক্ষ এজাবুল হক পলাতক থাকায় কলেজ পরিচালনা স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে গত ১৪/১১/২০২৪ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মোঃ মেসবাহুল আলম নামে একজন অধ্যাপককে এ কলেজে পদায়ন করা হয়। তিনি ১৭ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে যোগদান করে গত ২০ মে ২০২৫ পর্যন্ত এ কলেজে কার্যক্রম পরিচালনা করে আব্দুলপুর সরকারি কলেজে গত ২১ মে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। এই অধ্যক্ষকে কলেজ থেকে তাড়ানোর জন্য তিনি পলাতক অবস্থায় তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রীট করেন।
এরপর থেকে এ কলেজটি অভিভাবকহীন ভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তবে প্রায় এক বছর পর সম্প্রতি একজন রাজনৈতিক নেতার ছত্রচ্ছায়ায় অধ্যক্ষ এজাবুল হক মাঝে মধ্যে কলেজে প্রবেশ করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত তিনি তার অফিস কক্ষ খোলার অনুমতি না পাওয়ায় যত্রতত্র বসে অফিস করেন। বৈষম্য বিরোধী ও কলেজের শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে তার পদত্যাগের দাবিতে জুলাই আন্দোলনকালীন সময়ে পলাতক থাকায় অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দিয়ে মিছিল সহকারে জেলা প্রশাসক এর দপ্তরে গিয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খানের কাছে সেই চাবি জমা দেন বলে জানা যায়। পদায়নকৃত অধ্যক্ষ মোঃ মেসবাহুল আলম ১৭ নভেম্বর ২০২৪ থেকে ২০ মে ২০২৫ পর্যন্ত কলেজে দায়িত্ব পালন করলেও তিনিও ডিসি অফিসে আবেদন দিয়েও অফিস কক্ষ খুলতে পারেননি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা মাউশি থেকে এ বিষয়ে লিখিত নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত অফিস খোলা ফৌজদারী অপরাধ হওয়ায় না খোলাই উত্তম।