সংবাদ শিরোনাম ::
ঈদুল আযহা’র শুভেচ্ছা জানালেন বিএনপি নেতা মোঃ আনোয়ার হোসেন ধর্ম প্রাণ মুসলিমদের ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানালেন রাজশাহী বিভাগীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি আরিফ গোমস্তাপুরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী জেলা শাখার উদ্যোগে ওয়ার্ড সভাপতি সম্মেলন ২০২৫ অনুষ্ঠিত গোমস্তাপুরে অজ্ঞান পার্টি মেসার্স ভাই ভাই ভ্যারাইটিজ এন্ড ক্রোকারীজ এর ২০ হাজার টাকা নিয়ে গেলো লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং লিবার্টির সভাপতি হলেন নবীনগরের শরিফুল ইসলাম গোমস্তাপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নিহত গোমস্তাপুরে নদীতে গোসলে নেমে যুবকের মৃত্যু গোমস্তাপুরে এক্সটেন্ডেড কমিউনিটি ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রজেক্ট-ড্রট (ইসিসিসিপি-ড্রট)MAR স্থাপনের উদ্বোধন নাচোলে কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের আয়োজনে পার্টনার কংগ্রেস অনুষ্ঠিত

কুড়ানো আলুই ওদের সারা বছরের খাবার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:১৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫ ২৯ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

সোহানুল হক পারভেজ রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান : রাজশাহীর তানোরে বছরের এই সময়ে তেমন কাজকর্ম না থাকায় নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা অনেক দিনমজুর পরিবারের। তাই পরিবারকে সাহায্য করতে হাত বাড়িয়েছে ওরা। রমজান মাসে স্কুল বন্ধ। ক্লাসে যাওয়ার বালাই নেই। এদিকে মাঠের আলু তোলা শুরু হয়েছে কয়েক দিন আগেই। মালিক খেত থেকে আলু তুলে নেওয়ার পরও মাটিতে কিছু আলু চাপা পড়ে থাকে। জমির মালিক বোরো ধান রোপণ করবেন বলে ট্রাক্টর দিয়ে সেই জমি চাষ করতে শুরু করেছেন। ট্রাক্টরের লাঙলের আঁচড়ে উঠে আসছে মাটিতে চাপা পড়ে থাকা আলু। ট্রাক্টরের পেছন পেছন ছুটে সেই আলু সংগ্রহে নেমেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দরিদ্র পরিবারের স্কুলপড়ুয়া শিশু-কিশোরের দল। উপজেলার বিভিন্ন মাঠে প্রতিদিন শিশু-কিশোরদের পাশাপাশি বয়োজৈষ্ঠ নারী পুরুষদের দলবেঁধে আলু কুড়াতে দেখা যাচ্ছে।

 

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকেরা সাধারণত খেতের আলু নারী-পুরুষ শ্রমিক দিয়ে তুলে থাকেন। আলু তোলার সময় কিছু কিছু আলু মাটিতে চাপা পড়ে যায়। এসব শিশুদের মূল টার্গেট হলো এসব আলু সংগ্রহ করা। শুধু শিশু নয় অনেক বয়োজৈষ্ঠ নারী-পুরুষকে দলবেঁধে আলু কুড়াতে দেখা গেছে। তারা বাশিলা, কোদাল প্রভৃতি দিয়ে মাটি খুঁড়ে ওই আলু বের করে আনে। জমি চাষ করার সময়ও ট্রাক্টরের আঁচড়ে উঠে আসা আলুও মহা আনন্দে তারা দল বেঁধে কুড়িয়ে থাকে। এতে মাঝেমধ্যে জমির মালিকের গালমন্দও তাদের কপালে জোটে।

 

উপজেলার কালনা মাঠে ট্রাক্টরের পেছনে ছুটে আলু কুড়াচ্ছিল পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া শিশু শর্মিলা টুডু। সে বলে, ‘অ্যালা হামার স্কুল বন্ধ। বাড়িত কোনো কামকাজ নাই। ওই তকনে আলু কুড়ার আসছি। সারা দিন চার-পাঁচ কেজি আবার কনুদিন দশ কেজি আলু কুড়ি পাই। এগলা আলু বাড়িত নিগি দেই। মা হামাক আলু দিয়ে ভর্তা, ডাইল বানে খাওয়ায়।’প্রত্যেক বছর আলুর মৌসুমত হামরা স্কুল ছুটির পর দল বাঁধি আলু কুড়াবার ব্যার হই। সন্ধ্যা পর্যন্ত আলু কুড়িয়া যা পাই, তা মার কাছত জমা দেই। এই বছর স্কুল বন্ধ থাকায় সারা দিন হামরা আলু খুঁজি বেড়াই। মা এই সব আলু হাঁড়ি-পাতিল, বালুত সংরক্ষণ করি রাখে। অভাবের সময়টাত হামরা এই আলু খায়া বাঁচি।

 

উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) মাঠে আলু কুড়াতে ব্যস্ত একদল শিশু। কথা হয় আলু খেতের শ্রমিক স্বামীহারা আদরী বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, এসময় গ্রামোত তেমন কামকাজ নাই। এখন আলু তুলার কাম পাইছি। তাও মজুরি কম। সারা দিন কাজ করি ২৫০ টাকা পাই। এতে কোনো রকমে কয়টা দিন সংসার চলবে। যখন কাজ থাকবে না, তখন খুব কষ্টে দিন যাইবে। গত বছর আলুর যে দাম, হামার মতোন গরিব মানুষের তাক কিনি খাবার সামর্থ্য ছিলোনা। এবছর ছাওয়াগুলা যেকনা আলু কুড়াবি, তাতে সারা বছর খাবার হবি।

 

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহমেদ বলেন, গত বছর আলুর ভালো দাম পাওয়ায় অনেক কৃষক আলু চাষ বাড়িয়েছে। এ কারণে গত বছরের চেয়ে এ বছর বেশী জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। এখন চলছে আলু তোলার মৌসুম। তিনি বলেন, এবার আলু চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ১১৫ হেক্টর।কিন্তু চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

কুড়ানো আলুই ওদের সারা বছরের খাবার

আপডেট সময় : ১১:১৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

 

সোহানুল হক পারভেজ রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান : রাজশাহীর তানোরে বছরের এই সময়ে তেমন কাজকর্ম না থাকায় নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা অনেক দিনমজুর পরিবারের। তাই পরিবারকে সাহায্য করতে হাত বাড়িয়েছে ওরা। রমজান মাসে স্কুল বন্ধ। ক্লাসে যাওয়ার বালাই নেই। এদিকে মাঠের আলু তোলা শুরু হয়েছে কয়েক দিন আগেই। মালিক খেত থেকে আলু তুলে নেওয়ার পরও মাটিতে কিছু আলু চাপা পড়ে থাকে। জমির মালিক বোরো ধান রোপণ করবেন বলে ট্রাক্টর দিয়ে সেই জমি চাষ করতে শুরু করেছেন। ট্রাক্টরের লাঙলের আঁচড়ে উঠে আসছে মাটিতে চাপা পড়ে থাকা আলু। ট্রাক্টরের পেছন পেছন ছুটে সেই আলু সংগ্রহে নেমেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দরিদ্র পরিবারের স্কুলপড়ুয়া শিশু-কিশোরের দল। উপজেলার বিভিন্ন মাঠে প্রতিদিন শিশু-কিশোরদের পাশাপাশি বয়োজৈষ্ঠ নারী পুরুষদের দলবেঁধে আলু কুড়াতে দেখা যাচ্ছে।

 

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকেরা সাধারণত খেতের আলু নারী-পুরুষ শ্রমিক দিয়ে তুলে থাকেন। আলু তোলার সময় কিছু কিছু আলু মাটিতে চাপা পড়ে যায়। এসব শিশুদের মূল টার্গেট হলো এসব আলু সংগ্রহ করা। শুধু শিশু নয় অনেক বয়োজৈষ্ঠ নারী-পুরুষকে দলবেঁধে আলু কুড়াতে দেখা গেছে। তারা বাশিলা, কোদাল প্রভৃতি দিয়ে মাটি খুঁড়ে ওই আলু বের করে আনে। জমি চাষ করার সময়ও ট্রাক্টরের আঁচড়ে উঠে আসা আলুও মহা আনন্দে তারা দল বেঁধে কুড়িয়ে থাকে। এতে মাঝেমধ্যে জমির মালিকের গালমন্দও তাদের কপালে জোটে।

 

উপজেলার কালনা মাঠে ট্রাক্টরের পেছনে ছুটে আলু কুড়াচ্ছিল পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া শিশু শর্মিলা টুডু। সে বলে, ‘অ্যালা হামার স্কুল বন্ধ। বাড়িত কোনো কামকাজ নাই। ওই তকনে আলু কুড়ার আসছি। সারা দিন চার-পাঁচ কেজি আবার কনুদিন দশ কেজি আলু কুড়ি পাই। এগলা আলু বাড়িত নিগি দেই। মা হামাক আলু দিয়ে ভর্তা, ডাইল বানে খাওয়ায়।’প্রত্যেক বছর আলুর মৌসুমত হামরা স্কুল ছুটির পর দল বাঁধি আলু কুড়াবার ব্যার হই। সন্ধ্যা পর্যন্ত আলু কুড়িয়া যা পাই, তা মার কাছত জমা দেই। এই বছর স্কুল বন্ধ থাকায় সারা দিন হামরা আলু খুঁজি বেড়াই। মা এই সব আলু হাঁড়ি-পাতিল, বালুত সংরক্ষণ করি রাখে। অভাবের সময়টাত হামরা এই আলু খায়া বাঁচি।

 

উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) মাঠে আলু কুড়াতে ব্যস্ত একদল শিশু। কথা হয় আলু খেতের শ্রমিক স্বামীহারা আদরী বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, এসময় গ্রামোত তেমন কামকাজ নাই। এখন আলু তুলার কাম পাইছি। তাও মজুরি কম। সারা দিন কাজ করি ২৫০ টাকা পাই। এতে কোনো রকমে কয়টা দিন সংসার চলবে। যখন কাজ থাকবে না, তখন খুব কষ্টে দিন যাইবে। গত বছর আলুর যে দাম, হামার মতোন গরিব মানুষের তাক কিনি খাবার সামর্থ্য ছিলোনা। এবছর ছাওয়াগুলা যেকনা আলু কুড়াবি, তাতে সারা বছর খাবার হবি।

 

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহমেদ বলেন, গত বছর আলুর ভালো দাম পাওয়ায় অনেক কৃষক আলু চাষ বাড়িয়েছে। এ কারণে গত বছরের চেয়ে এ বছর বেশী জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। এখন চলছে আলু তোলার মৌসুম। তিনি বলেন, এবার আলু চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ১১৫ হেক্টর।কিন্তু চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন।